স্কুল থেকে যখন কলেজে উঠলাম, দুনিয়াটা কেমন বদলে গেল। আড্ডা (অবশ্যই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, এটার মজাটা আলাদা), সিগারেট, তর্ক আর তার ফাঁকে নবীণা বরণ।মনে- মনে। কখনো একই নবীণাকে একসঙ্গে বেশ কয়েকজনের মনে ধরলে সিগারেটের ধোঁয়াটা একটু বেশী রকম উড়তো। পাশাপাশি বসা বন্ধুরা কেমন formal tone – এ পরস্পর কথা বলতো।
সে সমস্ত নবীণারা শহরে যে সব আছে, তা নয়। যেমন বন্ধুরাও এদিক- ওদিক। ছড়িয়ে- ছিটিয়ে। কিন্তু সবাই আসে। ফিরে আসে বাড়িতে। দিন- সপ্তাহ- মাস কাটিয়ে চলে যায়। কাজের জায়গায়।
দেখা হয়। রাস্তা- ঘাটে। কথা হয়ত হয় না। যোগাযোগটা যে ক্ষীণ। সে সব নবীণারা আজ পৃথুলা। গিন্নি- বান্নি। বন্ধুরা লেশ- হীন কেশ। স্ফীতকায়।
ছেলেবেলার সেই বেহালা বাজানো লোকটা/ চলে গেছে বেহালা নিয়ে/ চলে গেছে গান শুনিয়ে… গাইছে গানওলা, স্টেজে। অনেকদিন পর। সময়টা আলাদা। অন্যরকম। হাতে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে গাইছে গানওলা,ঈষৎ ঝুঁকে।
কলেজের দিনগুলো কেমন ফিরে এলো।
সেই ফিরে আসা দিনের এক মানুষকে আজ স্মরণ। যতবার তাঁকে দেখেছি ফিটফাট। ধোপ দুরস্ত। সারাদিন চেম্বার। বিকেলে কখনো সন্ধের দিকে লাঞ্চ! একটু বিশ্রাম। তারপর আবার চেম্বার। অনেক রাতে খেতে বসার সময় লুঙ্গি- ফতুয়াতেও এক পরিপাটি। মুখে আলগা হাসি।
৮৫ বছরের আশেপাশে হিমাচলে বেড়াবার সময় এক গভীর খাদের দিকে ধাবমান যাত্রী -গাড়ির স্টিয়ারিং শেষ মুহূর্তে শক্ত হাতে ঘুরিয়ে দেন। নিশ্চিত মৃত্যু থেকে রেহাই পায় তাঁর পরিবার, আর ড্রাইভার! একটা গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়েই বিপত্তি।
স্টিয়ারিং সব সময় আয়ত্তে থাকে না। বিপর্যস্ত ড্রাইভার ছেলেটির মতো ডাক্তার বাবুরও হাতটা আলগা হয়ে এসেছিল বিরানব্বই-এ।
সকালের খাওয়া সেরে, দাড়ি কামিয়ে, চান করে, তাঁর আরাধ্যর কাছে হাতদুটো জড়ো করে কোন নিভৃত উচ্চারণে চলে গেলেন।
যাওয়াটাও সেই ফিটফাট। ধোপদুরস্ত।
কৈশোরে শেষ হওয়া, রংচঙে স্বপ্নের দিনের লোকেরা কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে।
আজ লায়ন্স ক্লাবে ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করবে তাঁর চেনা পরিজনেরা। সন্ধ্যা ৬ টায়।