‘পাসটা ঠিক করে দিস।’
যে ছেলেটি বললো তার মাথায় সাদা ফেট্টি। যাকে বললো সে সাদা – লাল জার্সি গায়ে।
পরক্ষণেই একটা উঁচু বল এসে পড়লো ডানদিক থেকে। মাটিতে পড়তে না পড়তেই সাদা ফেট্টির গ্রাউন্ডার শট। ছোট গোলপোস্টের ভেতর দিয়ে বল চলে গেল। গোলকীপার হাঁ করে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে। গোল! মেঘ-ঝোড়ো হাওয়া আর প্রায়- সন্ধের অন্ধকারের মধ্যে ছুটে এসে দলের ছেলেরা জড়িয়ে ধরলো ছেলেটিকে।

উল্লাসের মাঠে কাল প্রথম খেলা দেখতে গেলাম প্রায় চোদ্দবছর এখানে থাকার পর! মন্দ লাগলো না।
গোল দেখতে পেলাম।

স্কুটার চালিয়ে গাঙপুর বাজারে দ্রুত গেলাম। আজ, রোববারের সকালের সব্জি বাজারটা এগিয়ে রাখতে চাইলাম আর কি!
সব্জি বিক্রেতা বউটি রাজি হলো না। ‘কাল সকালে আসুন। ফ্রেশ পটল টমেটো আনবো।’

একটু দূরে গাঙপুর স্টেশনের সামনে এক অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ভেসে আসলো, ‘কী যে করি দূরে যেতে হয় তাই/ সুরে সুরে কাছে যেতে চাই…’

দমকা হাওয়ায় high – precision সুরগুলো কেমন যেন এসে ঘা দিচ্ছিল। এতবার শোনা। কিন্তু কেমন অন্যরকম লাগলো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।

কখনো সঘন বাদলের পরে/ প্রেমলিপি লিখি বিজুলি আখরে…
লতা মঙ্গেশকর এবার অন্তরায়। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাল। একটু পরে মেঘের গর্জন।
‘দাদা বাড়ি চলে যান। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে।’ বিক্রেতা বউটি বললো সব্জিগুলো একটা পুরনো কালো পলিথিন শিটে দ্রুত চাপা দিতে দিতে। ‘কাল ফ্রেশ পটল টমেটো…’

কী যে করি বলো এত আশা লয়ে/ বোবা হয়ে মরি এত ভাষা লয়ে। লতা- সলিলে এবার সঞ্চারী।

স্কুটার স্টার্ট দিলাম।
কপালে বৃষ্টির ফোঁটা পড়লো।
রাস্তায় পালা করে ঝড় আর বৃষ্টি আমাকে ধাওয়া করলো।

বাড়িতে এসে আগে চান করে নিলাম শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে।

বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে তাকিয়ে দেখি বৃষ্টি বন্ধ। পশ্চিম আকাশে স্মিত লাল রেখা।
অনেক অনেক দিন আগে, ছোট বেলায় ঠিক এই আবহেই শিখেছিলাম কোন এক রোববারে, এ কি এ সুন্দর শোভা…। সকালে যোশীজি ভূপালির আলাপ আমাদের দিয়ে করাচ্ছিলেন। বাবা বিকেলে বললেন রাগ ভূপালির গানরূপটা এবার দেখো; এ কি এ সুন্দর শোভা…।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কালবৈশাখী- ভূপালি-লতা- সলিল কেমন সব পালটে যায়। কারণ হয়তো আশ-পাশ সব পালটে যায়।

এখন শুধু গোলের চিৎকার; আর সকালের ফ্রেশ পটল-টমেটো…
কত কি যে করি!

সত্যি, কী যে করি!

Leave a Reply