বুদ্ধজন্মোৎসবের ঠিক আগের দিন, ‘বুদ্ধজন্মোৎসব’ নামে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ছে।
হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব,/ ঘোরকুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ।

কথাটা হচ্ছে, ঘোরকুটিল পন্থ। মানুষ এখান থেকে বেরোতে পারে না। সেটা সংসার-সমাজ- বহিঃসমাজ— সর্বত্র সত্য। তাই নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব। এখান থেকে মুক্তি নেই। যতদিন মানুষ থাকবে, হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বীও থাকবে। এটা মনে রাখতে হবে। মেনে নিতে হবে।

যে মানুষটি বলেছিলেন, প্রতিবেশীকে ভালোবাসো। সেই মানুষটিকেই হাতে- পায়ে পেরেক ঠুকে রক্তাক্ত করে নগর ঘোরানো হয়েছিল। একদল জনতা উন্মত্ত আনন্দে মেতেছিল।

এই বঙ্গেও উচ্চ-নিচ-জাত -পাত নির্বিশেষে প্রেমদান করতে যিনি বলেন, তাঁর মৃতদেহ পাওয়া যায় সমুদ্রে।

ভালোবাসার কথা বললে ঘোর কুটিল পন্থ শোধ নেবেই।কারণ সে লোভজটিলে বন্ধ।

এক মা তাঁর ছেলের সঙ্গে সূর্য স্নাত অতলান্ত সাগরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। ছেলে চললো যুদ্ধে। মাকে সে বলেছিল, যাবার দিনে এই কথাটি বলে যেন যাই / যা দেখেছি যা পেয়েছি তুলনা তার নাই।

পরে মৃত ছেলের বুক পকেট থেকে একটা চিরকুটে ছেলের হাতে লেখা এই লাইনগুলোই মা পান। নিচে লেখা ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

সুসান ওয়েন, মৃত যোদ্ধা- কবি উইলফ্রেড ওয়েন- এর মা কবিকে চিঠি লেখেন। স্বীকার করেন তিনি তাঁর ঠিকানা জানেন না। কিন্তু তিনি মনে করেন কবির নামই তাঁর ঠিকানা।

কবির ঠিকানা জানার দরকার নেই। তাঁর কবিতাই আমাদের দিশা। ঠিকানা। তাঁর কথাতেই তাঁকে স্মরণ করি —
তোমারি নাম বলব নানা ছলে,/ বলব একা বসে আপন মনের ছায়াতলে।

Leave a Reply