দশমীর পর ছোটবেলায় বাড়িতে এক বোষ্টমী গাইতে আসতো। গান শোনাতো বাগেশ্রী রাগে। সকালে রাতের আবাহন। কেমন যেন মানিয়ে যেতো সব । ছোটবেলার পর সেই বোষ্টমীকে আর দেখি নি।

বাড়িতে বাড়িতে নাড়কেল নাড়ু বানানো হতো তখন । একটা গুড়ের। আর একটা চিনির। একটা চাপা কালচে লাল রঙের। আর একটা সাদা। সেদিন দেখলাম দোকানে বিক্রি করছে নাড়ু। ছোট ছোট প্যাকেটে। নাড়ু প্যাকেটে? আনমনে বলে উঠলাম। কেউ এখন বাড়িতে বানায় না। প্যাকেট কেনে। তাই বিক্রি করি। ভালোই লাভ হয়। দোকানদার বললো। বুঝলাম অবাক প্রশ্নটা তাকেই করে ফেলেছিলাম।

আজ সকালে উল্লাসের ঢাকি ঢাক বাজিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে যে – যা – পারে তা নিয়ে চলে গেল। ঢাকের আওয়াজ সামনে থেকে চড়া। দূর থেকে করুণ। দেখলাম রেবা দি ঝাঁটা হাতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে জানলার পাশে। জড়ো করা গত কালের ধুলো পড়ে আছে ঝাঁটার পাশে। রেবা দির নজর এড়িয়ে। পাশের বাড়ির গাঙ্গুলি বাবু ছোট গেট ধরে দাঁড়িয়ে আছেন একটু ঝুঁকে। মধ্য – আশির মানুষটা একটু উদাসী আজ। সোম বাবুর স্ত্রী নাতনিকে খাওয়াতে যেন ভুলে গেছেন। বারান্দায় এসে দূরের দিকে তাকিয়ে আছেন। মুহূর্ত টা যেন স্থির হয়ে আছে। শুধু ঢাকের আওয়াজ দূর থেকে আরো দূরে চলে যাচ্ছে।

আসবো আসবো, এটাই ভালো। এলেই যেন চলে যাওয়া। বিরাজ দা, ড্রাইভার, বললেন যখন গতকাল বিসর্জন হচ্ছিল নাদরা আশ্রমে। ঠিক বলেছেন। আর একজন ড্রাইভার বললেন গাড়ি স্টার্ট করতে করতে পার্কিং লটে । চললাম। যাওয়ার সময় হাত নেড়ে বলে গেলেন। থাকতে পারলাম না আর। অনেক দূর যেতে হবে।বিরাজ দা তাঁর বন্ধুর দিকে তাকিয়ে একটু ম্লান হাসলেন।

Leave a Reply