ছোট বেলায় গান টা শুনেছিলাম।তদানীন্তন পূর্তমন্ত্রি যতীন চক্রবর্তী হঠাৎই আবিষ্কার করেছিলেন শ্রীমতি ঊষা উত্থুপের গান নাকি আসলে অপসংস্কৃতির চৰ্চা। গর্জে উঠেছিলেন শিল্পী। রেকর্ড বার করলেন। “আমি শিল্পী, আমি শিল্পী, আমি শিল্পী, আমি শিল্পী চাই শিল্পীর সম্মান।” পাড়ার পুজো প্যান্ডেল থেকে বিয়ে বাড়ি — সর্বত্র বাজতে লাগলো শিল্পীর সম্মান অধিকারের সদম্ভ নির্ভীক ঘোষণা। যতীন চক্রবর্তীর নাম কতো জন মনে রেখেছেন এখন জানি না, ঊষা উত্থুপকে সবাই চেনে, জানে একজন মানী শিল্পী হিসেবে।

কথাটা পাড়লাম এইকারণে যে আজ সকালে হঠাৎই আমার নজরে আসে বর্তমানের শ্রদ্ধেয়া এক রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর ফেসবুক লাইভ দেখে। জানতে পারি আমেরিকার এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের আমন্ত্রণে কলকাতার বেশ কিছু অতি নামী শিল্পী সেখানে গিয়ে চরম অসম্মানের মুখোমুখি হন। খাওয়া ঠিকঠাক জোটে নি। হোটেল ঘর থেকে কার্যত তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এমনকি পেমেন্ট পর্যন্ত বেশ কিছু শিল্পীকে দেওয়া হয় নি। অনুষ্ঠান করার নির্ধারিত সময়সীমাও কমিয়ে দেওয়া হয়। পরে দেখি ওই শিল্পীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়ে গেছে। সঙ্গে ফেসবুক লাইভ এর অংশটি মুছে দেওয়া হয়েছে। শিল্পীর অনুরাগীরা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে গোটা বিষয়টা দেখার জন্য।

শিল্পী জানিয়েছেন তিনি নিজে মার্কিন মুলুকের ওই সংগঠন কে বয়কট করছেন। ভবিষ্যতে কোনো অনুষ্ঠান করতে তিনি ওখানে যাবেন না। তিনি হয়তো সূক্ষ্মভাবে এটা বলতে চেয়েছেন সব শিল্পীরই এই পদক্ষেপটাই নেওয়া উচিত।

এখন এটাই দেখার বাংলার শিল্পীরা তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন কিনা।
আমার মনে হয় তা ঘটবে না। আবার যাবেন। অনুষ্ঠান করবেন। সংগঠকরা ক্ষমা চাইবেন।শিল্পীরা ক্ষমা করবেন। সংগঠকরা ডলার ছড়াবেন। শিল্পীরা ডলার কুড়োবেন। শুধু এই রবীন্দ্রসংগীত শিল্পীর মতো কয়েকজন হয়তো সম্মানীয় ব্যতিক্রমী হয়ে থাকতে পারেন।

এ প্রসঙ্গে দুটি ঘটনার উল্লেখ না করে পারলাম না। সাহিত্যিক আর. কে. নারায়ণ কে ব্রিটিশ সাহিত্যিক গ্রাহম গ্রীন মাদ্রাজ ছেড়ে ইংল্যান্ড গিয়ে থাকতে বলেছিলেন। যাতে তাঁর পরিচিতি বাড়ে। আর. কে. তাঁর সাধের ‘মালগুডি’ ছেড়ে যেতে চান নি। থেকে গেলেন স্ব – দেশে। সানাই বাদক বিসমিল্লা খান কে আমেরিকায় থাকার জন্য বেশ কয়েকবার অনুরোধ করা হয়। তিনি জানান ওখানে গেলে গঙ্গা আরতি দেখা তাঁর হবে না। আর তা দেখা না গেলে তিনি সানাইটাও বাজাতে পারবেন না। তিনি গঙ্গার ধারে ছোট্ট বাড়িতে থেকে গেলেন আজীবন।

আবেগের নাম শিল্পী। শিরদাঁড়ার নাম শিল্পী। সেটা খুব কম জনেরই থাকে। এটা আগেও সত্য। আজও সত্য। আগামী দিনেও তাই থাকবে।

Leave a Reply